কুষ্টিয়ার এই ৫ স্থান ঘুরে দেখেছেন কি

কুষ্টিয়া একটি সাহিত্য-সংস্কৃতির দিক থেকে সমৃদ্ধ জেলা, যা বাউল সম্রাট লালন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং “বিষাদ সিন্ধু”র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। আপনি চাইলে মাত্র দুই দিনের ভ্রমণে কুষ্টিয়ার এই ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন।

লালন সাঁইজির মাজার

কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো লালন আখড়া বা লালন সাঁইজির মাজার। এটি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলায় অবস্থিত। এটি মূলত লালনের কবরস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা। বছরে দুই সময়ে এ জায়গায় লালন মেলা বসে। একবার দোল পূর্ণিমার সময়, আরেকবার কার্তিক মাসের ১ তারিখে। ওই সময় দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও দেশের বাইরে থেকেও ভক্তরা যান সেখানে।

কুষ্টিয়ার মজমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ২০ মিনিটে লালন আখড়ায় যেতে পারেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি

বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি উল্লেখযোগ্য। এটি কুষ্টিয়া থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে, কুমারখালি উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নে অবস্থিত। আপনি কুষ্টিয়ার চৌড়হাস বা মজমপুর থেকে সহজেই অটোরিকশায় এখানে পৌঁছাতে পারেন।

এই কুঠিবাড়ি ৩৩ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত, যার মধ্যে মূল ভবনটি আড়াই বিঘা জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো কুঠিবাড়িতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮টি কক্ষ রয়েছে, এবং এটি অত্যন্ত নান্দনিকভাবে সাজানো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি তদারকি করতে প্রায় এক দশক ধরে এখানে অনিয়মিতভাবে অবস্থান করেছেন। তাঁর ব্যবহার করা অনেক স্মারক এখনো এখানে সংরক্ষিত আছে।

এখানে গেলে আশেপাশের বিখ্যাত কুলফি মালাই অবশ্যই খেতে ভুলবেন না!

মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা

বিখ্যাত উপন্যাসিক ও বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের জন্মভিটা কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে, লাহিনীপাড়া মোড়ে সৈয়দ মাসুদ রুমি সেতুর টোল ঘাটের কাছে অবস্থিত। আপনি অটোরিকশায় সহজেই সেখানে পৌঁছাতে পারেন।

এই ঐতিহাসিক স্থানকে কেন্দ্র করে এখন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর এবং অডিটোরিয়াম গড়ে উঠেছে। এখানে মীর মশাররফ হোসেনের ব্যবহৃত কিছু স্মৃতিচিহ্নও সংরক্ষিত রয়েছে।

ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ

কুষ্টিয়া সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিদর্শন। ইট, পাথর, বালি ও চিনামাটির সমন্বয়ে নির্মিত এই মসজিদটি শৈল্পিক কারুকার্য ও টেরাকোটার কাজে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর।

মসজিদের মূল কাঠামোতে তিনটি গম্বুজ এবং তিনটি দরজা রয়েছে। আপনি কুষ্টিয়া শহর থেকে সহজেই অটোরিকশায় মসজিদটি পরিদর্শন করতে পারেন।

লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

কুষ্টিয়া সদর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে ভেডামারা উপজেলায় অবস্থিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, যা লর্ড হার্ডিঞ্জের নামে নামকরণ করা হয়েছে, প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো। এই ব্রিজটি নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

ব্রিজটির পাশে লালন শাহ সেতু অবস্থিত, যা বাউল সম্রাট লালনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই সেতু পাবনা ও কুষ্টিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতু দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক এখানে আসেন।

এছাড়া, সেতু দর্শনের পাশাপাশি পদ্মার হিমেল হাওয়া এবং চরের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। নদীর ঘাটে ব্রিজের নিচে নোঙর করা নৌকাগুলোর মাধ্যমে ঘণ্টা চুক্তিতে নদী ভ্রমণ করে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। কুষ্টিয়া সদর থেকে বাস বা অটোরিকশায় এখানে যাতায়াত করা যায়।

ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় যাতায়াতের জন্য আপনি বাস কিংবা ট্রেন দুটোর মধ্যে যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। বাসে যাওয়ার জন্য কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ এসবি সুপার ডিলাক্স, শ্যামলী বা হানিফ বাসে উঠতে পারেন।

যদি ট্রেনে যেতে চান, তাহলে আপনি সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোল বা চিত্রা এক্সপ্রেসে চড়তে পারবেন। সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাড়ে, আর চিত্রা এক্সপ্রেস সন্ধ্যায় ছাড়ে।

ট্রেনে গেলে পোড়াদহ অথবা কুষ্টিয়া স্টেশনে নামতে হবে।

কোথায় থাকবেন

কুষ্টিয়ায় ৫ তারকা মানের হোটেল নেই, তবে বেশ কয়েকটি মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দিশা, হোটেল রিভারভিউ, ফেয়ার রেস্ট হাউস, হোটেল গোল্ডস্টার, হোটেল আজমিরী এবং হোটেল পদ্মা। এসব হোটেলে ৫০০ থেকে ২,০০০ টাকার মধ্যে থাকার সুযোগ রয়েছে।

আর কুষ্টিয়া গেলে বিখ্যাত তিলের খাজা এবং কুলফি মালাই খেতে ভুলবেন না!

এছাড়াও রাফিন ট্যুরস এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যোগাযোগ ০১৫৫২৩৩৩২৭২

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


×

আমাদের সম্পর্কে

রাফিন ট্যুরস বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় অবস্থিত একটি প্রিমিয়ার ট্রাভেল এবং ট্যুর কোম্পানি। ব্যতিক্রমী ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত, রাফিন ট্যুর হজ ও ওমরাহ প্যাকেজ, বাংলাদেশের মধ্যে স্থানীয় গ্রুপ ট্যুর, ভিসা প্রসেসিং, এয়ার টিকিট, ট্যুর কনসালটেন্সি এবং ট্যুর সলিউশন সহ বিভিন্ন ধরনের ভ্রমণ পরিষেবায় বিশেষজ্ঞ।

যোগাযোগ

ঠিকানা

কপিরাইট © ২০২৪ রাফিন ট্যুরস. সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ওয়েবসাইট ডিজাইন করেছে রয়েল টেকনোলজিস